ঢাকা | বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক: প্রসস্থকরণের পাশাপাশি জনসচেতনতাও জরুরি

.......................................
  • আপলোড তারিখঃ 28-11-2024 ইং |
  • নিউজটি দেখেছেনঃ 5442 জন
চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক: প্রসস্থকরণের পাশাপাশি জনসচেতনতাও জরুরি ছবির ক্যাপশন: ......................
ad728

সুব্রত দে (চট্টগ্রাম পিআইডি)

চট্টগ্রাম শহরে কর্মস্থল হওয়ার সুবাধে আমাকে কাপ্তাই সড়কের একজন নিত্যদিনের যাত্রী বলা যায়। শহর থেকে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ায় নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগলেও, প্রায় সময় তা হয় তিনঘন্টার ধাক্কা। সকালে অনেকটা হালকা থাকলেও বেলা গড়াতেই সড়কটি ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়। কর্মজীবী মানুষের ব্যস্ততা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে রাজায় গাড়ির পরিমাণ পাল্লা দিয়ে বেড়ে যায়। এছাড়াও যাত্রী চাহিদার বিপরীতে সাড়ে ছয় মিটারের এ রাস্তায় ধারণ ক্ষমতারও বেশি গাড়ি আসে। সাথে লেগে থাকে অপরিপক্ক বাস-সিএনজি চালক ও কম বয়সী বাইকারদের দৌরাত্ম্য। প্রতি মূহূর্তে লেগে থাকে অপ্রশস্থ রাস্তায় একজন আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উম্মাদ প্রতিযোগিতা। এসব কারণে প্রতিদিন সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট।


চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক বা কাপ্তাই সড়ক হল ৫২ কিমি বিশিষ্ট একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত। এই মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার লাখ লাখ মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। এই সড়কটি দিয়ে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি ও রাজহুলী থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও মাইক্রো, যাত্রীবাহী বাস, বিআরটিসির বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করে। মাত্র ১৮ থেকে ২০ ফুটের সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে


১৯৬৩ সালে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সময় চট্টগ্রাম থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পরিবহনের জন্য এই সড়ক নির্মাণ করা হয়। তখন এর দৈর্ঘ্য ৪৯ কিলোমিটার ছিল। সড়কটির জন্য ১৫ দশমিক ২৫ মিটার চওড়া জমি অধিগ্রহণ করা হলেও সে সময় ৬ মিটার চওড়া করে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৬২ সালে মহাসড়ক এলাকায় প্রথম বাস পরিবহন সেবা চালু হয়। পরে নবনির্মিত সড়কে লোকাল বাস পরিবহন সেবাও চালু করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে সেখানে লোকাল বাস পরিবহন পরিসেবা বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৩ সালে বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই এই সড়কে লোকাল বাস পরিবহন পরিসেবা পুনরায় চালু করা হয়। বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে এ সড়কে মানুষের যাতায়াত ও গাড়ি চলাচলের পরিমান বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।


এছাড়াও শিল্প কারখানা এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, কর্ণফুলী পেপার মিল এবং কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চুয়েট, বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, লেমউড কারখানা, সেনাবাহিনীর ২টি ইউনিট, নৌবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ ঘাঁটি, ২টি আনসার ব্যাটালিয়নে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটি। এর পাশাপাশি রাঙ্গুনিয়া, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে অসংখ্য নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্র (শেখ রাসেল ইকুপার্ক, কাপ্তাই লেক, রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ, মেখলা, নীলগীরি, নীলাচল) সবসময় ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় থাকে। সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে পিকনিক করার জন্যও প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক কাপ্তাই আসেন। এসব জায়গায় কম সময়ে ভ্রমণের জন্য সাবই কাপ্তাই সড়ককেই ব্যবহার করতে চায়, এর ফলেও এ সড়কের উপর যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ তাকে।


চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে রাঙ্গুনিয়ার শান্তিরহাট থেকে রোয়াজারহাট পর্যন্ত দূরত্ব ৫ কিমি দূরত্বের মধ্যে রয়েছে ৪ টি রাস্তাকেন্দ্রীক বাজার। এ ৫ টি স্থানে সপ্তাহের সাত দিনেই রাস্তার উপর বাজার বসে। এছাড়াও ঈদ-উল-আযহার সময় গোডাউন মোড়ে বসে গরুর বাজার এবং মরিয়মনগর চৌমুহনীতে প্রতিদিন সকালে সড়ক দখল করে বসে মাছ বাজার। এভাবে প্রতিনিয়ত এ সড়কের প্রচুর জনসমাগমের ফলে ঘটে নিত্য যানজট।


চট্টগ্রাম শহরের রাস্তার মাথা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত প্রায় ৪০টি বাঁক সড়কটিকে বিপজ্জনক করে তুলেছে। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা আর ব্যাপক যানজটের কারনে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ পথে চলাচলকারী লাখ লাখ যাত্রী। এছাড়াও সিএনজিচালিত অটোরিকশার দাপট রয়েছে চোখে পড়ার মতো। চালকদের হিসাবে, অন্তত ১০ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে এই সড়কে যার অধিকাংশ চালকই অপরিপক্ক-নেই লাইসেন্সও।


বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম হতে জানা যায়, প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রশস্থ সড়ক ও অপরিপক্ক চালক, সিএনজিচালিত


অটোরিকশার দূরন্তপনা, সড়কের উপর বাজার বসানো, ট্রাফিক সিস্টেমের অভাবে এ সড়কের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়াও সাধারণ মানুষের সদিচ্ছা, টার্মিনালের অভাব, আইন না মানার মানসিকতা সহ নানা কারণে কাপ্তাই সড়কে নানা সমস্যা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে।


সম্প্রতি কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে হাটহাজারী নজুমিয়াহাট মদুনাঘাট রাউজান গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়কের উভয় পাশে ৫ ফুট করে ১০ ফুট প্রশস্থ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথম ধাপে দুই প্যাকেজে ১৪ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্থকরণের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।


জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির পাশে তিনটি বড় বাজার রয়েছে (নজুমিয়াহাট, নোয়াপাড়া ও নয়াহাট)। সড়কের বাজার এলাকায় যানজট কমাতে ২শ মিটার সড়ক দ্বিগুণ করা হবে। এতে রাউজান নোয়াপাড়া বাজার অংশে দেয়া হবে সড়কের উভয় পাশে ২০০ মিটার ব্যারিয়ার। শুরুতেই চারটি প্যাকেজে এই প্রকল্পে ২৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্থকরণের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন প্রথম পর্যায়ে শুরু হচ্ছে দুটি প্যাকেজে ১৪ কিলোমিটার কাজ।


সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, চট্টগ্রামের


কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে হাটহাজারীর মদুনাঘাট হয়ে রাউজান নোয়াপাড়া গশ্চি ধরের টেক পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দুটি প্যাকেজে বিদ্যমান সড়কটির উভয় পাশে ৫ ফুট করে ১০ ফুট প্রশস্থ করা হবে। ওয়ার্ক অর্ডারের অনুমোদন হওয়ার পর কাজ শুরু হবে।


সড়কটি প্রশস্থকরণের কাজ শেষ হলে যানজট অনেকাংশে নিরসন হওয়ার পাশাপাশি রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, কান্তাই, বিলাইছড়ি ও রাজস্থলীতে উৎপাদিত কৃষি কৃষিপণ্য আরো কম সময়ে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছে যাবে। এতে পচনশীল কৃষিপণ্য নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। কৃষকরাও তাদের কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। কর্ণফুলী পেপার মিল ও কেএফডিসহ বিভিন্ন গার্মেন্টস শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল কম খরচে ও কম সময়ে কারখানায় পৌছানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পাঠানো সম্ভব হবে। এতে আরো সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।


সময়ের পরিক্রমায় রাস্তা প্রসস্থকরণের কাজ একদিন শেষ হবে। তবে সচেতন জনমনে প্রশ্ন? রাস্তা প্রসস্থকরণ কি একমাত্র সমাধান, নাকি জনসচেতনতাও এর পাশাপাশি প্রয়োজন? উদাহরণ স্বরূপ নিমতলা বিশ্বরোড সড়কটির কথা উল্লেখ করা যায়। সেখানে গাড়ি চলাচলের জন্য মাত্র ১ লেন খালি রেখে ২ লেনে থাকে কাভার্ডভ্যান দাড় করোনো। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের অনেক রাস্তায় এ দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এসব রাস্তা প্রসস্থ করলেও জনসচেতনতার অভাবে যানজট লেগেই থাকে, মিলছে না সুফল। সুতরাং শুধু রাস্তা প্রসস্থকরণ একমাত্র সমাধান বলা যাচ্ছে না, বরং রাস্তা প্রসস্থকরণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধে আরো কঠোর নজরদারী, অপরিপক্ষ ড্রাইভারদের লাইসেন্স তদারকিসহ ট্রাফিক আইনের প্রতি চালকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও আরো বেশি সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী উদ্যোগ জরুরি


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ Bangladesh Shomachar

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে: চসিক মেয়র