মোংলায় পশুর নদী ড্রেজিংয়ের বালি ফেলার প্রতিবাদে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ
শেখ রাসেল..মোংলা উপজেলা প্রতিনিধি..
মোংলার চিলা ইউনিয়নের সিন্দুরতলা গ্রামে বন্দর কর্তৃক পশুর নদী ড্রেজিংয়ের বালি ফেলার প্রতিবাদে গ্রামবাসী বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ৫ এপ্রিল সোমবার সিন্দুরতলা গ্রামের কৃষিজমি ও মৎস্য খামারের বিলে এসকল কর্মসুচি পালন করা হয়। জোরপূর্বক এবং কোন ধরণের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই বালি ফেলায় গ্রামবাসী তাদের আয় উপার্জনের উপর আঘাত বলে মনে করছেন। শর্ত না মেনে বালি ফেলার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন উপজেলা প্রশাসন। বন্দর কর্তৃপক্ষ’র দ্রুতই জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস।সোমবার সকাল ১১টায় সিন্দুরতলা গ্রামের বিলে গ্রামবাসীদের আয়োজনে ড্রেজিংয়ের বালি ফেলার প্রতিবাদ বিক্ষোভে কর্মসুচি, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন সিন্দুরতলা গ্রামের নারী-পুরুষ-শিশুসহ সকলে অংশগ্রহণ করেন। এসময় তাদের হাতে প্লেকার্ড লেখা ছিলো ”আমরা গরীব কৃষক ভাই, ধান মাছ চাষ করতে চাই” ”জলাশয়ে ভূমিত বালু কেন?” ”আমাদের জমি ভাড়া দেবে না”। কর্মসুচি চলাকালে গণমাধ্যমের কাছে গৃহিণী ঝুমুর বেগম বলেন ”আমাদের জমিতে অন্যায় ভাবে প্রচুর বালি ফেলা হচ্ছে। এখানে ফসল ফলিয়ে মাছ-ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করি। এতোবড় ক্ষতি হলে আমরা কীভাবে বাঁচবো”। সিন্দুরতলা গ্রামের রাজু শেখ বলেন ”১২ শতকের পুকুর পাঙ্গাস মাছ চাষ করি আমি বছর দুই লাখ টাকার মাছ চাষ করি। এরকম আরো বিশজন আছে। আমাদের কী হবে”। একই গ্রামর মোঃ আলাউদ্দিন বলেন ”জমির উপর পোর্ট অফিস জোর পূর্বক বালি ফেলছে। আমাদের উপর জুলুম করছে। ভাড়ায় আমরা জমি দেবো না। সব নির্ভর এই জমির উপর। ৩/৪টা ঘর করে সংসার চালাই । প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে যাবো তারপরও বালি ফলতে দেবো না। একশো বিঘা জমির ঘর মালিক শিমুল হাওলাদার বলেন বালি ফেললে কোন কিছু হবে না। কোম্পানী ৮ বিঘা জমি দিয়েছে বালি ফেলার জন্য তাতে আমার ৯২ বিঘার মাছের খামারের ক্ষতি হবে। এছাড়া জমিতে বালি ফেললে আমরা বাড়ী ঘর টিকাতে পারবো না”। সিন্দুরতলা গ্রামের গৃহিণী লিপি বেগম বলেন ”২০/২৫ ফুট ডাইক নির্মান করে জমিত বালি ফেলা হচ্ছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে এই জমির উপর নির্ভর করে চলি। এখন আমরা জীবন-জীবিকা কীভাবে নির্বাহ করবো”। বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শেষে কৃষিজমি এবং মৎস্য খামার রক্ষার দাবীতে গ্রামবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোঃ আলম গাজী। সিন্দুরতলা গ্রামবাসীর বিক্ষোভ, আন্দোলন এবং সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার কমলেশ মজুমদার বলেন ড্রেজিংয়ের প্রকল্প শুরু হয়েছে নদীর নাব্যতা রক্ষার জন্য যাতে পোর্টের পন্য পরিবহন সুবিধা হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব মহাদয় এ প্রকল্প’র উদ্বোধন করেন। গতকাল আমরা গ্রামবাসীরা অভিযোগ পেয়ে সরজমিনে যেয়ে অভিযোগের কিছু কিছু জায়গায় সত্যতা মিলছে। পোর্টের সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামবাসীর চুক্তি ছিলো ১০ ফুট উচ্চতার ডাইক নির্মান করে ৮ ফুট উচ্চতার বালি ফেলবে। কি তারা সেটা করছে না। বিষয়টি প্রকল্পের পরিচালক এবং বন্দরের প্রধান প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। আশাকরি বন্দর কর্তৃপক্ষ সমস্যার সমাধান করবেন। নদীর বালু ডাম্পিং বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রধান প্রকৌশলী ড্রেজিং প্রকল্প কর্মকর্তা শেখ শওকত আলী জানান, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জমির প্রকৃত মালিক ও ক্ষতিগ্রস্তদের ১০ বছরের জন্য ক্ষতিপূরন দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তালিকা প্রনয়নের সহ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ রয়েছে। শিগগিরই প্রকৃত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরনের অর্থ প্রদান করা হবে। সুবিধা ভোগীরা এ নিয়ে নানা চক্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।মোংলায় পশুর নদী ড্রেজিংয়ের বালি ফেলার প্রতিবাদে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ